ডালিম খাওয়ার নিয়ম ও বেদানার ঔষুধি গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

প্রিয় পাঠকগন, এখন আমি ডালিম ও বেদানা খাওয়ার বিষয়ে এবং সেই সবের ঔষধির যে সকল গুনাগুন রয়েছে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চাই। আমরা সবাই কম বেশী ডালিম ফলটির সাথে পরিচিত এবং প্রায় সকলেই ডালিম বা বেদানা ফলটি খেয়ে থাকি।

ডালিম খাওয়ার নিয়ম ও বেদানার ঔষুধি গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
তাই ডালিম বা বেদানা বা আনার এর ইংরেজি নাম পমেগ্রানেট এবং বৈজ্ঞানিক নাম পুণিকা গ্রানেট। ডালিম lythraceous পরিবারে পুণিকার অন্তর্ভুক্ত এই ডালিম ফলের গাছগুলো।

ভূমিকা

ডালিম বা বেদানা বা আনার ফলের ইংরেজি নাম পমেগ্রেনেট। তবে হিন্দুস্তানি, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে কিন্তু আনার বলা হয়। আবার কুর্দি ভাষায় হিনার আর আজারবাইজানি ভাষায় একে নার বলা হয়ে থাকে। এদিকে সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় দারিম বলা হয়ে থাকে। বেদানা বা ডালিম গাছগুলো, ৫ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

ডালিমের পাকা ফল গুলো দেখতে টুক টুকে লাল রঙের হয়ে থাকে। ডালিমের ফলের ভিতরে যে লাল লাল রঙের দানা থাকে সেগুলোকে আমরা খেয়ে থাকি। ডালিম বা বেদানা বা আনার ফলের আদিনিবাস ছিল ইরাক এবং ইরান। প্রাচীনকাল থেকেই ককেসাস নামে এই অঞ্চলে আনার ফলের চাষ বাস করে আসছে এখানকার লোকজনেরা।

ককেসাস থেকে ভারত উপমহাদেশে এসে প্রায় সব অঞ্চলেই বিস্তার লাভ করে এই ডালিম বা আনার ফলটি।

বর্তমান যুগে এই ফলটি 

  • আজারবাইজান
  • স্পেন
  • আর্মেনিয়া
  • ইরান
  • তুরস্ক
  • আফগানিস্তান
  • ভারত
  • পাকিস্তান
  • সিরিয়া
  • ইরাক
  • মিশর
  • লেবানন
  • চীন
  • বার্মা
  • ইসরাইল
  • জর্ডান
  • সৌদি আরব
  • ফিলিপাইন
  • দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শুষ্ক অঞ্চল
  • ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল
  • দক্ষিণ ইউরোপ
  • ক্রান্তীয় আফ্রিকা সহ
  • বাংলাদেশ

এই সমস্ত দেশগুলোতে ডালিম বা বেদানা বা আনার ফলটি ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। ১৭৬৯ সালে স্পেনীয়রা ক্যালিফোর্নিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে আনার ফল নিয়ে যায় এবং বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ও এরিজোনায় ব্যাপকভাবে এগুলোর চাষ করা হচ্ছে।

ডালিম বা বেদানা বা আনার ফলের ঔষুধি গুনাগুন সমূহ

ডালিম বা বেদানা বা আনার ফলটি আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পথ পদর্শক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমে 

  • বিউটেলিক এসিড
  • আরসোলিক এসিড পাওয়া যায়।

এই ছাড়াও কিছু অ্যালকালীয় দ্রব্য সমূহ হলো:

  • সিডো প্যারাটাইরিন
  • মিথাইল প্যারাটাইরিন
  • পেপরেটাইরিন
  • আইসো পেরেটাইরিন

এই সমস্ত প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় ইহা বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি সারাতে এটি ব্যবহার করা হয়। তবে, কবিরাজি মতে ডালিম হচ্ছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এই ফল কুষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী হিসেবে ভালো উপকার হয়। এই ছাড়াও ডালিম গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদারাময় রোগের ঔষুধ তৈরি করা হয়। ইহা ত্রিদোষ বিকাশের উপশামক, শুক্রবর্ধক, প্রদাহ জ্বর, পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। সেই সাথে ডালিমের ফুল রক্ত স্রাবনাশক।

  • হঠাৎ করে যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে তাহলে ডালিম ফুল কুচলিয়ে রস বের করে নাকের কাছে নিয়ে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্তঝরা এটি একটি সাধারণ রোগ। বহু লোকের এরকম হয়ে থাকে। অনেকের বিনা কারণে নাক দিয়ে রক্ত ঝরে থাকে। শিশুদের মাঝেও এমনটি দেখা যায় যদি এমন হয় তাহলে একই ধরনের ফর্মুলা প্রয়োগ করলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিমের ফুলে ব্যবহারে অত্যান্ত কার্যকরী ফল পাওয়া যায়, হঠাৎ কখনো দুর্ঘটনায় শরীরের কোন অংশ ছেঁড়ে গেলে থেঁতলে গেলে বা কেটে রক্তপাত হলে ডালিম ফুল বেঁটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ডালিমের ফুল না পেলে পাতাও ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
  • ডালিম গাছের ছাল গুড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যেকোনো স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভালো উপকার পাওয়া যায়। মহিলাদের প্রদর রোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল অনেক উপকারি প্রদর একটি জটিল মেইলি রোগ।

প্রদর দুই প্রকার 

  • ১ রক্ত প্রদর ও
  • ২ শ্বেত প্রদর

উভয় প্রকার প্রদরে ৪ থেকে ৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সমূহ সেরে যায়।

৪। ডালিমের খোসা দিয়ে আমাশয় নিরাময় করা যায়। যারা আমাশয়ের রোগী ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে এটিও ভাল কাজ করে। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই খুবই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা না ফেলে এটিকে শুকিয়ে ঘরের মধ্যে রেখে দেওয়া ভালো।

৫। গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা খুবই উপকারী। অনেক মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায় আবার কোন কোন মহিলার একাধিকবার এই রকম হয়ে থাকে সেই জন্য ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দূর হয়।

৬। ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমির মহৌষধ হিসাবে কাজ করে। কৃমি রোগ আমাদের একটি জাতীয় সমস্যা। কৃমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানা ধরনের সমস্যায় ভোগে তাই ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে খেলে খুব সহজে কৃমিনাশক হয়। তবে বয়স অনুযায়ী ১-৩ গ্রাম পরিমাণ মতো সেবন করতে হবে। 

৭। ডালিম গাছের ছাল বাচ্চাদের পেটের রোগ নিরাময়ে অনেক উপকারে আসে। বাচ্চারা অনেক প্রকারের পেটের সমস্যায় ভুগে থাকেন। যে সকল বাচ্চাদের পেট বড় হয়ে যায় বা অনেক রকমের পেটের পিড়াই ভোগে তাদের জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে দিলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।

৮। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি ডালিম খায় তাহলে সেই ক্ষেত্রে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে মূলত ডালিম বা বেদানা বা আনার গাছ, ফল, ফলের খোসা ও পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কোনোটাই ও কার্যকর নয়। ডালিম গাছের ফুল ফল পাতা ডালপালা সবকিছুই অনেক রকমের উপকারে আসে।

৯। ডালিম প্রতিনিয়ত খেলে শরীরের মধ্যে রক্ত বৃদ্ধি করে।

আনার ফল বিষয়ে আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য

আনার ফল বিষয়ে আমরা আরো কিছু বিস্তারিত তথ্য জানবো যেমন আনার বা বেদানা বা ডালিম সম্পর্কে জানা যায় যে দেহের মধ্যে বা শরীরের মধ্যে ১৩ টি সমস্যার সমাধান করে থাকে।

বেদানা খেলে ১৩ টি উপকার মিলবে

বর্তমান সময়ে যদি আমরা আমাদের শরীরকে ভালোভাবে বাঁচতে চেষ্টা করি তাহলে বেদানা রসের কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে। যদি বলি ডালিমের ভিতরে উপস্থিত ও ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরো নানাবিধ শক্তিশালী উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র প্রতিটি কোষ শিরা এবং উপশিরাকে সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তোলে আর যে কোন ছোট বড় রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। শুধু এটি নয় শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে উঠে যে আয়ু বাড়ে চোখে পড়ার মতো তবে এখানে কিন্তু শেষ নয়। এই ফলের রসকে জায়গা করে দিলে আরো অনেক উপকার পাওয়া যায়। 

  • ১ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ডালিমের ভূমিকা
  • ২ জয়েন্ট এর সচলতা বৃদ্ধি পায়
  • ৩ চুল পড়ার হার কমে যায়
  • ৪ হার্টের ক্ষমতা বাড়ে
  • ৫ পেটের মধ্যে যে সকল পীড়া রয়েছে সেগুলো কমে যায়
  • ৬ অ্যানিমিয়ার মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেষতে পারে না
  • ৭ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
  • ৮ ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগ ধারে কাছেও আসতে পারেনা
  • ৯ দাঁত ভালোভাবে শক্তপোক্ত হয়
  • ১০ ব্রেনের ডিজিজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়
  • ১১ ডায়াবেটিসের মত রোগসমূহ দূরে থাকে
  • ১২ কাশি বা গলা ব্যথা দূর হয়ে যায়

কাশি বা গলা ব্যথা হলে বেদানার খোসা থেকে তৈরি পাউডার গরম জলে ফুটিয়ে গরল করলে আরাম পাওয়া যায়

  • ১৩ ভিটামিনের ঘাটতি সমূহ দূর হয়

দেহকে সুস্থ সবল রাখতে যে সকল ভিটামিন গুলোর প্রয়োজন পড়ে দৈনন্দিন তার প্রায় সবগুলোই সন্ধান পাওয়া যায় ডালিম বা বেদানাতে যেমন ধরুন ভিটামিন সি ভিটামিন ই ভিটামিন কে সেই সাথে ফলের পটাশিয়াম এবং আরো অন্যান্য ভিটামিন তাই দীর্ঘদিন থেকে যদি আপনি সুস্থ ভাবে বাঁচতে চান তাহলে এই ডালিম বা বেদানা ফলটির সঙ্গে বন্ধুর মতো প্রতিনিয়ত খেয়ে যাবেন তাহলে সুস্থ্য সবল থাকবেন।

লেখকের মন্তব্য


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url