জমি মাপার সঠিক পদ্ধতি গুলো জেনে নিন-বিস্তারিত
জমি মাপার সঠিক পদ্ধতি গুলো জেনে নিন
আমরা অনেকেই জমি মাপার পদ্ধতি জানি না। তাই, সাধারণত জমি মাপার সময় আমরা একজন আমিন বা সার্ভেয়ারের শরণাপন্ন হয়। এই ব্যাপারে তখন আমাদের সেই সার্ভেয়ার বা আমিনের উপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতারিত হবার কিছুটা সম্ভাবনা থেকে যায়। জমি পরিমাপের বেসিক ধারণা পারে এই সমস্যা থেকে সমাধান দিতে।
এই ছাড়া জমি পরিমাপ জানা থাকলে জমি কেনার সময় জমির পরিমাণ নিজেই মেপে বের করা যায়। এই লেখাটিতে জমি মাপার বিভিন্ন সূত্র এবং নিয়মগুলো জানা থাকলে আশা করি, জমি মাপার বিষয়টি আপনাদের কাছে খুবই স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।
জমির মাপের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন একক:
১ শতাংশ = ১০০০ বর্গলিংক
১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
১ শতাংশ = ১৯৩.৬০ বর্গহাত
১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ
১ শতাংশ = ৪০.৪৭ বর্গ মিটার
জমি কেনার আগে আপনাকে যা যা জানতে হবে
বিভিন্ন পরিমানে জমির হিসাব:
এক ১ শতক = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
এক ১ শতক = ৪৮.৪০ বর্গ গজ
এক ১ শতক = ৪০.৪৬ বর্গমিটার
এক ১ শতক = ১৯৪.৬০ বর্গহাত
এক ১ শতক = ১০০০ বর্গ লিংক
এক ১ কাঠা = ১.৭৫ শতক ( 35 এর মাপে)
এক ১ কাঠা = ১.৬৫ শতক (৩৩ এর মাপে)
এক ১ কাঠা =১.৫০ শতক (৩০ এর মাপে)
এক ১ একর = ৬০.৬০ কাঠা
এক ১ একর =৩.০৩ বিঘা
এক ১ হেক্টর = ২.৪৭ একর
এক ১ একর =৪৩৫৬০ বর্গফুট
এক ১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ
এক ১ একর = ৪০৪৬ বর্গমিটার
এক ১ একর = ১৯৪৬০ বর্গহাত
এক ১ একর = ১০০০০০ বর্গ লিংক।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়
একটি জমির দৈর্ঘ্য উত্তর আইল ৫০ ফুট, দক্ষিণ আইল ৫৪ ফুট, প্রস্থ-পশ্চিম আইল ৩০ ফুট, ভিতরে এক অংশে ৩৪ ফুট, এক অংশে ৩৮ ফুট এবং পূর্ব আইল ৪০ ফুট জমিটির পরিমাণ কত?
জমিটির দৈর্ঘ্য ৫০ + ৫৪ = ১০৪ (দুই দিকের দৈর্ঘ্য যোগ করা হলে) তাই ২ দিয়ে ভাগ করলে দৈর্ঘ্য পাওয়া যায় (১০৪ ভাগ ২ ) = ৫২ ফুট।
জমিটি প্রস্থে অসম হওয়ায় এর ২ দিকের বাউন্ডারির প্রস্থ ছাড়াও ভেতরের দিকে অন্তত ২টি প্রস্থ পরিমাপ এবং তা গড় করে মূল প্রস্থ বের করা যায় ৩০ + ৪০ + ৩৪ + ৩৮ = ১৪২ (ফুট) এর গড় (১২৪ ভাগ ৪) ৩৫.৫ ফুট।
ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য গুনিত প্রস্থ = ৫২ গুনিত ৩৫.৫ = ১৮৪৬ বর্গফুট (জমিটির ক্ষেত্রফল)
সূত্র মতে ৪৩৫.৬০ বর্গফুট = ১ শতাংশ।
অতএব উপরের জমিটির পরিমাণ (১৮৪৬ ভাগ ৪৩৫.৬০) = ৪.২৪ শতাংশ।
পর্চা দাখিলনামা জমাবন্দী দাখিলা দাগ নাম্বার ছুটদাগ কি?
ক্ষেত্রফল আকৃতির জমির মাপ:
প্রথমেই সূত্রগুলো জেনে নেওয়া যাক-
ক্ষেত্রফল = বাহু গুনিত বাহু
কর্ণ = ১ বাহু গুনিত ১.৪১৪
পরিসীমা = ১ বাহু × ৪
এখন যদি প্রশ্ন হয় একটি বর্গ ক্ষেত্রের বাহুগুলির দৈর্ঘ্য ১২০ লিঙ্ক করে হলে উহার ক্ষেত্রফল এবং জমির পরিমাণ বের কর।
তাহলে আমরা জেনেছি যে ক্ষেত্রফল = বাহু × বাহু = ১২০×১২০=১৪৪০০ বর্গলিংক (যদি ক্ষেত্রফলের একেকটি বাহু ১২০ লিংক হয়)।
এখন আমরা আগেই জেনেছি যে ১ শতাংশ = ১০০০ বর্গ লিংক তাহলে জমির পরিমাণ,
১০০০ বর্গ লিংক =১ শতাংশ
১ বর্গ লিংক = ১০০০ ভাগের ১ ভাগ
১৪৪০০০ বর্গ লিংকে কত হবে?
সুতরাং এক লক্ষ ১৪৪০০০ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গ লিংকে ১০০০ দিয়ে ভাগ দিলে যা হবে তাই হচ্ছে তার ফল অর্থাৎ ১৪.৪০ শতাংশ হবে।
জমি মাপের সহজ পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি
গ্যান্টার জরিপ:
ইংরেজ বিজ্ঞানী গ্যান্টার জরিপ কাজে ব্যবহৃত চেইন আবিষ্কার করেন। তাই তার নামানুসারে এই চেনের নামকরণ করা হয়েছে “গ্যান্টর্রস চেইন”। এই চেনের দৈর্ঘ্য ২২ গজ বা ৬৬ ফুট। এতে ১০০টি লিংক আছে। প্রতি লিংকের দৈর্ঘ্য সাত ৭.৯২ ইঞ্চি এর দুই মাথায় দুটো হাতল এবং দশম লিংক একটি করে ” পেন্ডিল” বা পুলি আছে।
ইদানিং ফিতা, ট্যাব ব্যবহার করেও জমি পরিমাপ করা হয়। সার্ভেয়ার বা আমিন সব সময় পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হিসাব ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি নিজেই জমি পরিমাপ করতে পারবেন।
হিসাবটি হলো:
১০০০ বর্গ লিংক (৩১.৬২×৩১.৬২ লিংক) ১ শতাংশ।
১৯৪.৬ বর্গ হাত (১৩.৯৫×১৩.৯৫ হাত) = ১ শতাংশ।
১০.০০০ বর্গ লিংক (১×১ চেইন) = ১০ শতাংশ।
৩৩.৩ শতাংশ কার্যত ৩৩ শতাংশ =১ এক বিঘা । (স্ট্যান্ডার্ড বিঘা)
১০০ শতাংশ বা ৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর।
৪৮৪০×৯(৯ বর্গফুট=১ বর্গ গজ বলে =৪৩৫৬০ বর্গফুট।
৪৩৫৬০× ১০০(১০০ শতাংশ ১ একর বলে) = ৪৩৫.৬ বর্গফুট।
অতএব এক ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট বা ৪০.৪৬ বর্গমিটার প্রায়।
আমাদের দেশে কোথাও ৩৫ শতাংশে এক ১ বিঘা, কোথাও ৩৩ শতাংশে এক ১ বিঘা আবার ইদানিং 30 শতাংশে এক ১ বিঘা বলা হচ্ছে।
যদিও সরকারি বিঘা তেত্রিশ ৩৩ শতাংশেই করা হয়। অপরদিকে কাঠার পরিমাণ শতাংশের পরিমাণে স্থান বিশেষ পার্থক্য হলেও কুড়ি ২০ কাঠায় এক বিঘার হিসেবে সর্বত্র প্রচলিত ও স্বীকৃত আছে।
ডায়াগোনাল স্কেল:
ডায়াগনাল স্কেল একটি চার কোনা বিশিষ্ট তামা ব্রঞ্চের তৈরি স্কেল। ইহার চার পাশে ১০ টি ঘর বা কক্ষ থাকে প্রতিটি ঘরের মান ১০০ লিংক। ১৬” ইঞ্চি = এক ১ মাইল স্কেলে ইহা তৈরি করা হয়। এবং গান্টার চেইনের সাথে মিল আছে বলে একে গান্টার স্কেলও বলা হয়।
আভার অফসেট:
এটি একটি প্লাস্টিকের তৈরি স্কেল এই স্কেলের সাথে গান্টার স্কেলের মিল আছে। ইহার দৈর্ঘ্য ২” ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৫” ইঞ্চি এই স্কেলের সাহায্যে নকশার সংকুচিত দূরত্ব সহজে মাপা যায়। এটা ছাড়া অফনেট নেওয়ার ক্ষেত্রে ইহা বিশেষ সুবিধাজনক। গুনে গুনে সংখ্যা হিসাব করা যায় বলে একে গুনিয়া বলা হয়।
ডিভাইডার বা কাটা কম্পাস
ইহা একটি জ্যামিতিক কম্পাস। ইহার সাহায্যে নকশার সংকুচিত দূরত্ব নিয়ে ডাইগোনাল স্কেলে মাপ নেওয়া যায় এবং দূরত্ব গুনিয়া সংখ্যা বুঝা যায়।
জোনাল জরিপ
ভূমি সংস্কার কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রিভিশনাল সেটেলমেন্ট পদ্ধতির পরিবর্তে ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে স্থায়ী পদ্ধতির জোনাল সেটেলমেন্ট আরম্ভ হয়। ১০ টি বৃহত্তর জেলায় জরিপ কাজ হয় এবং এই জরিপে সৃষ্ট খতিয়ানকে বাংলাদেশ সার্ভে বা বি. এস. খতিয়ান বলে। কেউ আবার একে আর. এস. খতিয়ান বলে।
দিয়ারা জরিপ
দরিয়া শব্দ থেকে দিয়ারা শব্দের উদ্ভব হয়। যে সকল এলাকায় নদী বা সাগরের কারণে জমির ভাঙ্গাগড়া বেশি হয় সে অঞ্চলে দিয়ারা জরিপ পরিচালিত হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url