মধু আহরনকারী পুরুষ মৌমাছির বিষয়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য সমূহ

 

মধু আহরনকারী পুরুষ মৌমাছির বিষয়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য সমূহ

আজকে আমি আপনাদেরকে মৌমাছির সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য দিতে চাই। আমরা সাধারনত সবাই মধু খেয়ে থাকি মধু খায় না এমন কাউকে পাওয়া মুশকিল। কারণ মধু এমন একটি জিনিষ যা অন্যান্য মিষ্টির সাথে তুলনাও করা যায় না। আমরা কিন্তু অনেক সময় কথায় কথায় বলে থাকি মধুর মত মিষ্টি আর কিইবা আছে মধুর মত মিষ্টি হলে খাব ইত্যাদি।

মধু আহরনকারী পুরুষ মৌমাছির বিষয়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য সমূহ


ভুমিকা

পুরুষ মৌমাছির অবধারিত মৃত্যু হবে জেনেও কেন সে তার সঙ্গীনি মৌমাছির সাথে মিলন করে? আমরা দেখেছি মৌমাছি সাধারনত শান্ত স্বভাবের হয়ে থাকে। কিন্তু এই সব মৌমাছি মরনের জন্য একটুও ভয় পায় না বা পিছু হটে না। কোন একটি লোককে মেরে ফেলতে হলে মোটামুটি এগারোশত ১১০০ মৌমাছির হুলের বিষের দরকার। 

এগারোশত ১১০০ মৌমাছিকে প্রায় নব্বই ৯০ হাজার মাইল বনে বাদাড়ে জঙ্গলে আসে পাশের ফুলের বাগানে এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয় শুধুমাত্র এক ১ কেজি মধু নিজেদের বানানো মৌচাকের মধুর জন্য। এটা নাকি চাদের কক্ষপথের মোটামুটি ৩ তিনগুনের মতো। তাহলে বুঝতেই পারছেন এরা কতই না পরিশ্রম করে। 

আবার এদিকে আমরা যদি ফুলের হিসাবের জন্য যায় তাহলে এই মৌমাছিরা চল্লিশ ৪০ লক্ষ ফুলের পরাগরেণু বা ফুলের পাপড়ির যে শিশিরের মত ফোটা ফোটা পানি জমে থাকে সেটি স্পর্শ করে আর নিজের মৌচাকের জন্য নিয়ে আসে। শুধুমাত্র এক ১ কেজি মধুর রসের জন্য বুঝতেই পারছেন। 

এই ছাড়াও আমরা যদি দেখি আবহাওয়া ঠিক ঠাক আছে আর মৌসুমটা অনেক ভালো সেই ক্ষেত্রে এরা মোটামুটি পযান্ন ৫৫ কেজি মধু মৌজাকে জমা করে থাকে যা অবাক হওয়ার মত।  এই সকল তথ্য থেকে আমরা বুঝতেই পারছি কর্মী মৌমাছিরা কত পরিমাণ কাজ করে থাকে বা পরিশ্রম করে থাকে। অন্যদিকে রাণী মৌমাছি খায় আর খায় সেই সাথে সাথে ডিম পাড়ে।  

রানী মৌমাছিটির কতগুলো ডিম

এই দিকে রাণী মৌমাছি প্রত্যেক দিন পনেরোশত ১৫০০ থেকে দুই হাজার পাঁচশত ২৫০০ ডিম দিয়ে থাকে। আবার অন্যদিকে পুরুষ মৌমাছির স্বভাব অন্যরকম মানে অদ্ভত একটা স্বভাবের মত। এরা কোন দিনই কোন রকমের কাজ করে থাকে না। এদেরকে কর্মী মৌমাছিরা তাদের খাবার গুলো পুরুষ মৌমাছিদেরকে খাওয়ে দিতে হয়। 

সেই জন্যই কিন্তু পুরুষ মৌমাছিদের জীবনের একটি মাত্র উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে আর সেটি হলো রাণী মৌমাছিটির সঙ্গে মিলিত হওয়া বা মিলন করা। একত্র বা মিলন হওয়ার মৌসুমে প্রত্যেক দিন দুপুরের সময় মৌমাছির চাকের সর্বচ্চ ও সর্বাধিক সক্ষম পুরুষ মৌমাছিরা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ভিড় জমায় বা ভিড় করে থাকে আর এটিকে বলা হয় পুরুষ মৌমাছির ধর্মসভা বা বোর্ড সভা। 

রাণী মৌমাছির বাইরে বের হওয়া

কিন্তু ঠিক সেই সময়েই মৌমাছির চাক থেকে রাণী মৌমাছিটি তখন বাইরে ঘুরতে বের হয়ে আসে। যাকে সাধারণত বলা হয় ”দা মিটিং ফ্লাইট” কারণ সেই সময়েই রাণী মৌমাছিটি হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ে যায় সেই পুরুষদের ধর্মসভা বা বোর্ড সভার এলাকায়। রাণী মৌমাছিটি সেখানে ঢুকেই এক ধরনের বিশেষ গন্ধ তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।

সেই সময় সেই গন্ধটির জন্যই কিন্তু শত শত মৌমাছি পুরুষরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে যায় আর তখনই রাণী মৌমাছিটি উড়ন্ত অবস্থাতেই তার পছন্দের পুরুষের সঙ্গে মিলন করে থাকে। কিন্তু রাণী মৌমাছিটির এক অবাক করা কান্ড সে একবারই পরস্পর আঠারো ১৮ থেকে ২০ টার মত পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে মিলিত হতে পারে। 

পুরুষ মৌমাছিটির মৃত্যু

কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো মিলিত হবার সময় পুরুষ মৌমাছির এন্ডোফেরাস বা যৌনাঙ্গটি ভেঙ্গে যায় আর সাথে সাথেই পুরুষ মৌমাছিটি মারা যায়।সেই জন্য এই মিলিত হওয়াকে বলে থাকে “দা ড্রামাটিক সেক্সচুয়াল সুইসাইড।” মৌমাছির একটি মৌচাকে শুধুমাত্র একটিই রাণী মৌমাছি থাকে। রাণী মৌমাছিটিকে কেন্দ্র করেই কিন্তু মৌমাছির মৌচাকটি গড়ে তুলা হয়।

আবার যদি কোন ডিম থেকে কোন স্ত্রী মৌমাছির জম্ম হয়। তখন কর্মী মৌমাছিরা সেই শিশু স্ত্রী মৌমাছিটিকে লুকিয়ে রাখে যাতে সেই রাণী মৌমাছিটির নজরে না পড়ে। কারণ রাণী মৌমাছির নজরে পড়লে সেই ছোট্র স্ত্রী মৌমাছিটির মৃত্যু অবধারিত। এদিকে আবার ছোট্র রাণী মৌমাছিটি বড় হলে পর তখন দুই মৌমাছি রাণীর মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। 

মৌচাক বানানোর দুই ধরনের রাস্তা

সেখানে কিন্তু দুইটা রাস্তা খুলে দেওয়া থাকে। যেমন যুদ্ধে মৃত্যুবরন অর্থাৎ একজন অন্যজনকে মেরে ফেলে মৌচাকটিকে নিজের করে নেয়। এইছাড়া দুজনই আলাদা আলাদা দুটো মৌচাক তৈরি করে থাকে। আবার কখনও যদি কোন রাণী মৌমাছি মারা যায় তখন সাথে সাথেই মারা যাবার খবরটি অর্থাৎ ১৫ মিনিটের মধ্যেই সমস্ত কর্মী মৌমাছিরা সেই খবরটি পেয়ে যায়। 

মধু তৈরির জন্য ২০ লক্ষ ফুল

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তখন সম্মিলিত ভাবে নতুন রাণী মৌমাছি বানানোর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। আবার কিছু বিস্ময়কর সব বিষয়গুলো রয়েছে যেগুলো জানার পর অবশ্যই আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। পাঁচশত ৫০০ গ্রাম মধু বানানোর জন্য বিশ ২০ লক্ষ ফুল লাগে। কর্মী বা শ্রমিক মৌমাছিগুলো তাদের গোটা জীবনে মাত্র আধা চা চামচ মধু বানাতে পারে। 

লেখকের মন্তব্য

আসলে পৃথিবীতে না জানা ঘটনার মধ্যে এটি কিন্তু আমাদের কাছে অবাক করার মত একটি ঘটনা। সেই জন্য আমরা যেন কোন কিছু বিষয়কে নিয়ে গর্ব না করি তবে কিছু কিছু বিষয়ে গর্ব না করেই থাকা যায় না। যেমন আবারও আরেকটা মজার বিষয় হলো এই পৃথিবীতে মধুই একমাত্র খাদ্য যেটি কখনোই পঁচে যায় না। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url